ঘৃণার নয়, সংলাপের রাজনীতি: তারেক রহমানের বার্তা

সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবিসি বাংলার সঙ্গে একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন ও ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। বিশেষ বিষয় হলো, এই সাক্ষাৎকারে তিনি কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সরাসরি আক্রমণ করেননি। বরং বার্তাটি ছিল স্পষ্ট: রাজনীতিতে ঘৃণা ও বিরোধের বদলে ইতিবাচক, গঠনমূলক ও নীতিনিষ্ঠ ধারার বিকাশ জরুরি।
তারেক রহমানের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, বিএনপি এখন এক নতুন দিকনির্দেশনা গ্রহণের পথে। দেশের রাজনীতি প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে, তবে তা হওয়া উচিত নীতিমূলক, ভদ্র ও সংলাপভিত্তিক। “জনগণের আস্থা ফিরে পেতে হলে রাজনীতিতে ঘৃণা নয়, সহযোগিতা ও দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিতে হবে,” বলেছেন তিনি। এটি একটি স্পষ্ট সংকেত যে, দীর্ঘ ১৬ বছরের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সংস্কৃতিকে বদলানোর প্রয়াস শুরু হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দেশে প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, তিনি শারীরিকভাবে যুক্তরাজ্যে থাকলেও মন-মানসিকতায় দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে দেশের সঙ্গে যুক্ত। দ্রুত দেশে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা বিএনপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। জনগণের প্রত্যাশিত অংশগ্রহণ থাকলে তিনি নিজেও নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারেক রহমানের এই টোন কৌশলী ও সমন্বিত। নেতিবাচক আক্রমণ বা প্রতিপক্ষকে টার্গেট করার বদলে তিনি রাজনৈতিক সংলাপ, জনসংযোগ এবং ইতিবাচক বার্তার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। এটি শুধুমাত্র বিএনপির ভাবমূর্তির উন্নয়ন ঘটাবে না, বরং তরুণ ভোটারদের মনোযোগ আকৃষ্ট করার নতুন পথও খুলে দেবে।
জুলাই আন্দোলন এবং ‘মাস্টারমাইন্ড’ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেছেন, আন্দোলনের সফলতা কেবল কোনো এক ব্যক্তির কারণে নয়; এতে অংশ নিয়েছেন জনগণ, ছাত্র-যুব সমাজ, শ্রমিক ও বিভিন্ন পেশার মানুষ। এভাবে তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনকে গণমুখী ও সমন্বিত হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। মানুষের অংশগ্রহণকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলেই চিহ্নিত করেছেন, যা রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য শিক্ষণীয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি যখন নেতিবাচক ভাষা পরিহার করে ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা দিচ্ছে, তখন তা বাংলাদেশের রাজনীতির সংস্কৃতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করছে। দেশকে সাম্প্রতিক অতীতের প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে মুক্ত করতে এই দৃষ্টিভঙ্গি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
সর্বোপরি, তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন এবং সংলাপভিত্তিক রাজনীতির সূচনার প্রতিফলন। এটি দেখাচ্ছে যে, রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারা গড়ে তোলা সম্ভব, যেখানে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু ঘৃণা ও বৈরিতা থাকবে না। এই নতুন রূপরেখা শুধু বিএনপির জন্য নয়, পুরো রাজনৈতিক সমাজের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।